বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার থানার ওসি খন্দকার তবিদুর রহমানের বিরুদ্ধে এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী যুবক মো. জালাল উদ্দিন (৩২) আইজিপি ও পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, থানার এএসআই জামান মিয়া ও রাশেদুল ইসলাম তাকে অন্যায়ভাবে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন এবং সেখানে তাকে বেধড়ক প্রহার করেন ওসি। ঘটনাটি ঘটে ১৯ মার্চ ২৪ রাত আটটার দিকে আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া এলাকায়।
অভিযোগে ঘটনার বিবরণ
জালাল উদ্দিন তার অভিযোগে বলেন, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তিনি স্থানীয় আজিজের দোকানে বসে ছিলেন। সে সময় হঠাৎ থানার দুই এএসআই জামান মিয়া ও রাশেদুল ইসলাম সেখানে এসে তাকে থানায় যেতে বলেন। ওসি স্যার তাকে ডাকছেন বলে জানান তারা। জালাল উদ্দিন কারণ জানতে চাইলে কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
থানায় পৌঁছানোর পর ওসির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলে, ওসি খন্দকার তবিদুর রহমান তাকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমাকে জামান মিয়া একটি গরু দিতে বলছিল, দাওনি কেন?” জবাবে জালাল উদ্দিন বলেন, তিনি গরু ব্যবসা করেন না, তাই গরু দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি নির্দেশ দেন তাকে মেঝেতে শুইয়ে দিতে। এএসআই জামান ও রাশেদুল নির্দেশ পালন করেন এবং জালালকে মেঝেতে শুইয়ে দেন।
জালালের অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর ওসি স্বয়ং তার পায়ের ওপর পা দিয়ে চাপ দেন এবং প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেদম মারধর করতে থাকেন। থেমে থেমে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাকে প্রহার করা হয়। এ সময় ওসি তাকে ৫ লাখ টাকা দিতে বলেন, না হলে মাদকের মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। ওসির টেবিলে ৪ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট রাখা ছিল, যেগুলো দিয়ে তাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন জালাল।
নির্যাতনের পর ঘুষ দিয়ে মুক্তি
জালাল উদ্দিনের পরিবার ঘটনা জানার পর তার পিতা মো. ইউনুচ থানায় গিয়ে ছেলেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন। তখন ওসি ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ২ লাখ টাকায় সমঝোতা ছেড়ে দেওয়ার কথা হয়। পরের দিন সকালে জালালের পিতা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে থানায় গিয়ে জালালকে মুক্ত করেন। বাকি ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য তার বড় ভাই ইউনূচকে ৩ দিন সময় দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থায়ীয় জনপ্রতিনিধি কি বলেন
এ বিষয়ে নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, “টাকা দিয়ে জালালকে থানার বাইরে নিয়ে আসা হয়। পরে শুনেছি, তাকে বেদম মারধর করা হয়েছে।”
এ ঘটনার পর জালাল উদ্দিন থানার ওসির বিরুদ্ধে সরাসরি আইজিপি ও এসপির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেন, ওসির এ ধরনের অমানবিক আচরণের জন্য তার এবং তার পরিবারের বড় ক্ষতি হয়েছে। তিনি ন্যায়বিচারের দাবি করেছেন এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
ওসি কি বলেন
এদিকে আলীকদম থানার ওসি খন্দকার তবিদুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগে করা হলে তিনি বলেন,“ একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে জালালকে থানায় আনা হয়। সমাধান হলে পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মারধর ও টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা”। চেয়ারম্যান টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, “কেন চেয়ারম্যান এধরণের কথা বলছেন জানি না। জালাল উদ্দিন মাদকের সাথে জড়িত ছিল”।
স্থানীয় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
এ ধরনের ঘটনা এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ থানা পুলিশের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং নির্যাতনের সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন।
এদিকে এর আগে, খন্ডকার তবিদুর রহমান আলীকদম থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে সম্প্রতি মোঃ জোহার ও খুরশেদ আলম নামে দুই ব্যক্তি থানায় ধরে নিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগ করে সরকারের উপর মহলে। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর ওসির বিরোদ্ধে মানববন্ধন করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা।