আলীকদম প্রতিনিধি: আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের রেপারপাড়ার দরিদ্র মাহিদ্রা চালক আব্দুল হাকিম। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালানো তাঁর জন্য কষ্টকর।
তবে অদম্য মনোবল থাকলে দারিদ্র্য জয় করা সম্ভব, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন আব্দুল হাকিমের মেয়ে নুসরাত জাহান লাবনী । গত ১৩ মে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে কারিগরি বিজ্ঞান বিভাগে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
আব্দুল হাকিমের সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে । মাহিন্দ্র গাড়ি চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। কিন্তু সন্তানের লেখাপড়া করিয়ে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। তিনি নিজেও উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি, অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে চাকরির জন্য ঘুরেছেন নানা প্রতিষ্ঠানে, নিরাশ হয়েছে বারেবারে। শেষে জীবনে সব সহায় সম্বল দিয়ে কিনে নিলে একটি মাহিদ্রা গাড়ি। সেটা চালিয়ে চলে সংসার।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নুসরাত জাহান লাবনীর সাথে।সে বলে,
বাবাকে অনেক কষ্ট করতে দেখেছি পড়ালেখার খরচ যোগাতে। তবু বাবা আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মা-বাবা আমাকে অনুপ্রেরণা যোগিয়েছেন। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকেরা আমার পাশে ছিলেন’
সে আরও বলে, ‘নবম শ্রেণিতে আমার রেজাল্ট খারাপ হয়, খুবই ভেঙ্গে পড়িছিলা লেখা পড়া নিয়ে, বাবা সাহস দিয়েছেন, শিক্ষকরা অনুপ্রাণিত করেছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন, আমি তাদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ’,।
তার বাবা আব্দুল হাকিম এবং মা নাসিমা আক্তার জানান,
তাঁদের মেয়ে লেখাপড়ার বাইরে অন্য কোনো আবদার করেনি। অভাবের সংসারে তার অনেক শখ পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের এই ফলাফলে তাঁরা খুশি।
চৈক্ষ্যং আর্দশ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দীন বলেন,
‘আমরা খুবই আনন্দিত। নুসরাত জাহান লাবনী একজন মনোযোগী ছাত্রী হিসেবে সবার প্রিয় ছিল। পিছিয়ে পড়া একটা এলাকা থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করা মোটেই সহজ নয়। সে ছাড়াও কারিগরি শাখার বিজ্ঞান বিভাগ এই বিদ্যালয় থেকে আরো ৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ- ৫ পেয়েছে , মোট শিক্ষার্থী ছিল ৩২ জন। অত্র এলাকায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে গিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে গেছি। শিক্ষার্থীদের সাফল্য সে পরিশ্রম বৃথা যায়নি। আমরা শিক্ষকেরা সব সময় তাদের পাশে ছিলাম।
তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করছি।’