প্রশান্ত দে, আলীকদম।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বান্দরবানের একমাত্র টেন্ট ক্যাম্পিং বা তাঁবুনিবাস আবার চালু হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি আলীকদম উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বৌদ্ধধর্মীয় গুরুদের সঙ্গে আলোচনার পর ট্যুরিস্ট ক্যাম্পটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পর্যটকরা আবার আগের মতো তাঁবুতে রাত যাপন করতে পারবেন। আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মারাইংতং বান্দরবানের বুকে যেন এক টুকরো স্বর্গরাজ্য। এই স্বর্গরাজ্যে চুপি চুপি মেঘের সঙ্গে রুপকথার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া যায়।
রাতের আঁধারে মখমলের মতো মেঘ ছুঁয়ে দেখার অনন্য এক অনুভূতি, যা শুধু মারাইংতংয়ের পাহাড় চূড়ায় পাওয়া যায়। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মিরিঞ্জা রেঞ্জের মারাইংতং পাহাড়ের চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ ফুট উঁচু। ওখানে দাঁড়িয়ে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। শুধু অনুভূতি নয়, কিছু চ্যালেঞ্জও থাকে পাহাড় জুড়ে। পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্পিং করাটা অনেকটা বেশ সাহসের ব্যাপার। একদিকে চিম্বুক রেঞ্জ এবং অন্য দিকে মাতামুহুরী নদী। পাহাড়টি মূলত ক্যাম্পিং করার সাইট হিসেবে পর্যটকদের নিকট বেশ জনপ্রিয় দীর্ঘদিন ধরে। এই পাহাড়ে রয়েছে ত্রিপুরা, মারমা, ম্রোসহ বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস।
মারাইংতং পাহাড়চূড়ায় উঠতে মোট ৫টি ট্রেইল রয়েছে। এর মধ্যে খারা ট্রেইলটি ৭২ ডিগ্রি কোণে ভূমি থেকে চূড়ার দিকে উঠে গেছে। ২৫০ থেকে ৩০০টি তাঁবুতে প্রতিদিন একসঙ্গে ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যটকের রাত কাটানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। মারাইংতং পাহাড়ের ট্যুরিস্ট ক্যাম্প ঘিরে এলাকার অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী বৌদ্ধ মেলা আয়োজনের কথা রয়েছে। মারাইংতং বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ উ উইচারা মহাথের এবং আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার তবিদুর রহমান জানান, মারাইংতং চূড়ায় কিছু ট্যুরিস্ট গাইড মাদক বিক্রি করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে পর্যটকদের টেন্ট ক্যাম্পিং সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। আলীকদম উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রথম সভায় ট্যুরিস্ট ক্যাম্পটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে জনপ্রতিনিধিরা স্বাগত জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পর্যটকরা আবার তাঁবু নিবাসে যেতে শুরু করেছেন। মারাইংতংয়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে গেলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। পাহাড়টির চূড়ায় রয়েছে বৌদ্ধমন্দির ও বৌদ্ধমূর্তি, যা বৌদ্ধধর্মীদের মহাপূণ্যস্থান এবং পূজারিদের জন্য তীর্থস্থান। ২০১৪ সাল থেকে মারাইংতং পাহাড়ে টেন্ট ক্যাম্পিং শুরু হয়। শীতের শুরু থেকে বর্ষার আগ পর্যন্ত এই তাঁবুবাস পর্যটন চলে। এখানে নীল আকাশের সঙ্গে সবুজবেষ্টিত পাহাড়ের মিতালি বেশ উপভোগ করা যায়। অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতি উপভোগ, বনভোজন বা বারবিকিউর অভিজ্ঞতা যে পর্যটকের হয়েছে, তিনি বারবার ফিরে আসতে চান মারাইংতং পাহাড় চূড়ায়। এমনিতেই বান্দরবান বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে এলেই দেখা মেলে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ের সারি, চারদিকে সবুজ আর সবুজ। চোখের প্রশান্তির সঙ্গে আছে প্রাণভরে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার শান্তি।