আলীকদম থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) খণ্ডকার তবিদুর রহমানকে সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ওসি তবিদুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে টাকা আদায়ের মতো গুরুতর অপরাধ। গত ১৬ অক্টোবর তার বিরোদ্ধে আলীকদমের স্থানীয় জনতা ও ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করার পর ১৭ অক্টোবর তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়।
দীর্ঘদিনের অভিযোগ
খন্ডকার তবিদুর রহমান আলীকদম থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে সম্প্রতি মোঃ জোহার ও খুরশেদ আলম নামে দুই ব্যক্তি থানায় ধরে নিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগ করে সরকারের উপর মহলে। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর ওসির বিরোদ্ধে মানববন্ধন করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা।
ওসির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসায় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। তবিদুর রহমানের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো তিনি থানায় আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করতেন। এই কাজটি তিনি তার সহকর্মী দুই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মামুন এবং এসআই জামানের সহযোগিতায় পরিচালনা করতেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার
ওসি তবিদুরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও বেশ গুরুতর। তিনি তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে বা হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করতেন। থানার কাজে সাধারণ জনগণের হয়রানি ও অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করার অভিযোগও উঠেছে। অনেক সময় থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগও শোনা যায়। তার অধীনে থানার কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের অভাব ছিল, যা স্থানীয় জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘুষ ও দুর্নীতি
তবিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ঘুষ নিতেন এবং বিভিন্নভাবে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করতেন। কোনো মামলা বা অভিযোগকে সমাধান করার জন্য তিনি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতেন বলে অভিযোগকারীরা দাবি করেন। এমনকি মামলার এজাহার নথিভুক্ত করতে বা কোনো আসামিকে ছেড়ে দিতে তার কাছে ঘুষের প্রস্তাব আসত। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি তার ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া, তিনি থানার অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও এই দুর্নীতির জালে জড়িয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশেষত, এসআই মামুন এবং এসআই জামান তার এই দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতেন।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর, প্রশাসন তবিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তাকে আলীকদম থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। যদিও বদলির বিষয়টি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এদিকে এসআই মামুন এবং এসআই জামানের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানা গেছে।
স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
ওসি তবিদুরের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাদের দাবি, থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যেভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা প্রশাসনের কাছে তার কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন এবং এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবিদুর রহমানের এই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু স্থানীয় প্রশাসনের নয়, গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলছে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে আরও স্বচ্ছ ও কঠোর হতে হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই হতে পারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়।
স্থানীয়ভাবে এই বদলির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এলাকাবাসী মনে করছেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও আশা করছেন, নতুন ওসি নিয়োগের মাধ্যমে থানায় স্বচ্ছতা ও সেবার মান নিশ্চিত করা হবে।
আলীকদম থানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব ধরনের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে এবং যদি আরও কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।